বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি জানতে ইচ্ছুক। তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন্য বৃষ্টির পানিতে কোন কোন ভিটামিন থাকে সে সম্পর্কে জানতে হলে আটিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করার পদ্ধতি এবং বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে কি কি উপকার হয়, বৃষ্টির পানিতে কি কি উপাদান রয়েছে তাহলে চলুন এই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করি। সম্পূর্ণ বিষয় জানতে আর্টিকেলটি মন দিয়ে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
- বৃষ্টির পানির উপকারিতা সম্পর্কে
- বৃষ্টির পানির অপকারিতা
- বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে
- বৃষ্টির পানিতে কোন এসিড থাকে
- বৃষ্টির পানি কি খাওয়া যায়
- বৃষ্টির পানিতে ভিজলে জ্বর কেন আসে
- বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি
- বৃষ্টির পানিতে গোসল করার উপকারিতা
- বৃষ্টির পানিতে কি কি উপাদান রয়েছে
- লেখকের মন্তব্য বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে
বৃষ্টির পানির উপকারিতা সম্পর্কে
বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদেরকে আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন আমরা বৃষ্টির পানির উপকারীতা সম্পর্কে জেনে আসি।বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন রয়েছে বৃষ্টির পানি খেলে আমাদের শরীরে কি কি উপকার হয়। বৃষ্টির পানিতে আমাদের শরীরে নানান স্বাস্থ্যবিদ উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। তবে পানি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে তবে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে। তাহলে চলুন বৃষ্টির পানিতে কি কি স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে আপনারা জেনে নিন।
- বৃষ্টির পানি খাওয়ার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। কারণ বৃষ্টির পানিতে অ্যালকালাইন নামক উপাদান রয়েছে। এইজন্য আপনি প্রতিদিন পরিষ্কার বৃষ্টির পানি নিয়মিত খেলে এসিডিটি সমস্যা দূর করে।
- বৃষ্টির পানি পাকস্থলীর যাবতীয় সমস্যা দূর করতে খুব কার্যকর। পাকস্থলীর সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন নিয়মিত দুই থেকে চার চামচ পরিষ্কার বৃষ্টির পানি খেতে পারেন এতে আপনার পাকস্থলী জ্বালাপোড়া বা অন্যান্য সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
- বৃষ্টির পানি আমাদের শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে ভালো লাগে। কারণ বৃষ্টি পানি এর কারণে চারিদিকে পরিবেশ শান্ত নিরিবিলি থাকে এতে শরীরকে শারীরিকভাবে চনমনে করে তোলে।
- বৃষ্টির পানি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কারণ বৃষ্টির পানিতে অ্যালকালাইন নামক উপাদান রয়েছে, যা আপনার শরীরে পিএইচ কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এটি করে আপনি মরণব্যাধি ক্যান্সার রোগ থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাবেন।
- বৃষ্টির পানি কানের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে আশ্চর্যভাবে কাজ করে। নিয়মিত বৃষ্টির পানি কিভাবে কানের ব্যথা ইনফেকশন অন্যান্য সমস্যা নিরাময় করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন।
- বৃষ্টির পানি জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। কারণ বৃষ্টির পানি পরিবেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
- বৃষ্টির পানি বিশুদ্ধতা রয়েছে কারণ বৃষ্টির পানি আকাশ থেকে পতিত হওয়ার সময় নানা ধরনের জীবাণু মুক্ত থাকে। যদি পরিবেশ দূষিত হয়ে না থাকে সেক্ষেত্রে।
- বৃষ্টির পানি মাটি ও কৃষকের অত্যন্ত উপকারী। কারণ বৃষ্টির পানি মাটির আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এতে কৃষকের ফসল ফলাতে এবং ফসলে ভালো ফলাফল পেতে খুব ভালো কাজ করে।
- বৃষ্টির পানি বায়ু পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। কারণ বৃষ্টি হওয়ার সময় বিভিন্ন ধরনের ধুলা বালু রোগ জীবাণু দূষিত কণা অণু জীব এবং অন্যান্য জীবাণু মুক্ত করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়ায় পানিগুলো পরিষ্কার ও জীবনে মুক্ত হয়ে থাকে।
- বৃষ্টির পানি পরিবেশের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। কারণ বৃষ্টির পানি গাছপালায় এবং মাটিতে পড়লে চারিদিকে তাপমাত্রা শোষণ করে পরিবেশ শীতল রাখতে সাহায্য করে।
- বিকল্প হিসেবে বৃষ্টির পানি আমাদের অনেক সময় কাজে লাগে। কারণ যখন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিবেশের পানি দূষিত হয় তখন বৃষ্টির পানি আমাদের বিকল্প পানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
- বর্তমান সময় পানি খাওয়ার খরচে বেশি পড়ে। এতে করে আপনারা চাইলে অল্প খরচে এই পানিটি সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে পারেন, অল্প খরচে পানি ব্যবহার করার সহজ উপায় তবে যে এলাকাগুলোতে বৃষ্টি বেশি হয় তাদের জন্য খুবই কার্যকর।
- বৃষ্টির পানি জমি গাছপালা সকল উদ্ভিদের জন্য উপকারী। কারণ বৃষ্টির পানিতে রাসায়নিক পদার্থ বা অতিরিক্ত মিনারেল না থাকায় কারণে জমির গুণগত মানকে ঠিক রাখে। তাছাড়াও বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হওয়ার কারণে জমিতে সেচের কাজ করে।
- বৃষ্টির পানি পানি সরবরাহ করার ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে। কারণ গ্রীষ্মকালে অনেক নলকূপে পানির নাগাল পাওয়া যায় না। তখন বৃষ্টি হলে আস্তে আস্তে পানির নাগালে আসে।এই জন্য বৃষ্টির পানিকে জলের উৎস বলা হয়।
বৃষ্টির পানির অপকারিতা
বৃষ্টির পানির যেমন অনেকগুলো উপকারিতা রয়েছে তেমনি কয়েকটি অপকারিতা ও রয়েছে। তাহলে চলুন বৃষ্টির পানি অপকারিতা সম্পর্কে জেনে আসি। বৃষ্টির পানি খেলে অথবা বৃষ্টির পানি পরিবেশের কি কি ক্ষতি করে জেনে নিন।
- অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বন্যা হতে পারে। বন্যাঝুঁকি প্লাবন এলাকাগুলোর সাধারণ মানুষের এবং কৃষি জমির অনেক ক্ষতি হয়। এবং মানুষের বসবাস করা প্রায় অনেক কষ্টসাধ্য হয়।
- অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ার কারণে মাটি ক্ষয় হয়। এতে করে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয় এবং কৃষি জমি ফসল উৎপাদনে হ্রাস প্রায়।
- পানির গুণগত মান নষ্ট হয়, কারণ অনেক সময় বৃষ্টির পানি রাসায়নিক পদার্থ তেল জৈব পদার্থ বা অন্যান্য দূষিত পদার্থ মিশে জলাশয়ের পানি দূষিত করে। যার ফলে পানির গুণগত মান নষ্ট হয়।
- বৃষ্টির পানির কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে। বৃষ্টির পানি বিশুদ্ধ বা পরিষ্কারভাবে পরিশোধন না করে খেলে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
- বৃষ্টির পানি মাটির অম্লতা বৃদ্ধি করে দিতে পারে। কারণ বৃষ্টির পানি অনেক সময় অ্যাসিডিক উপাদান নিয়ে পতিত হয়। এতে মাটির অম্লতা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- প্রাকৃতিক বিপর্যয় হওয়ার কারণে অনেক সময় বড় বড় পাহাড় ধুষে যায়। এতে মানুষের প্রাণহানি এবং কৃষিকাজে বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতি হয়।
- অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ার কারণে বিভিন্ন জায়গায় বন্যা সৃষ্টি হয় এতে নদী ভাঙ্গন বা অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয় এতে সাধারণ মানুষের চলাফেরা খুব সমস্যাকর হয়ে ওঠে।
সম্মানিত পাঠক, এই ছিল বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে তবে উপকারিতা পেতে পানি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে তবে সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে বৃষ্টির পানি আমাদের মানব শরীরে অনেক বড় বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে।
বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে
আমরা অনেকেই জানি যে বৃষ্টির পানিতে ভিটামিন রয়েছে। তবে কেউ জানে না কি ভিটামিন রয়েছে আসলে সত্যিই কি বৃষ্টির পানিতে ভিটামিন রয়েছে। সত্যি বলতে পানিতে কোন ভিটামিনই নেই। মূলত বৃষ্টির পানি মেঘের কনডেনসেশনের থেকে জমা হয়।যা পানি থেকে ক্ষুদ্র অনু ও বায়ুমণ্ডলের গ্যাস ক্ষুদ্র করার সংমিশ্রণ।বৃষ্টির পানি যখন মেঘের থেকে পতিত হয়।
তখন এটি পরিবেশের উপাদান যেমন ধূলা, বালু, পলল অন্যান্য ক্ষুদ্র অনু দ্বারা প্রবাহিত হয়। যদিও বৃষ্টির পানি প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ হতে পারে। প্রতিকূল পরিবেশে বিভিন্ন উপাদান দ্বারা প্রবাহিত হয়। এর উদাহরণস্বরূপ হলো বৃষ্টির পানি যদি দূষিত পরিবেশে পতিত হয়। তবে তা রাসায়নিক বা অন্যান্য দূষিত উপাদান দাঁড়া দূষিত হতে পারে যা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই ভালো নয় প্রাকৃতিকভাবে যে বৃষ্টি হয় এই বৃষ্টিতে কোন ধরনের ভিটামিনের অস্তিত্ব নেই।
তবে বৃষ্টির পানিতে হালকা পরিমাণ অ্যালকাইন এবং অণুজীব থাকে। যা বিপাকের মাধ্যমে আমাদের শরীরে ভিটামিন বি১২ তৈরি করতে সাহায্য করে। তাছাড়া এই ভিটামিন বিভিন্ন খাদ্য বা প্রাণীজ উপাদান থেকেই এ ভিটামিন পাওয়া যায়।আপনারা এতক্ষণ অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে কি না।এই বিষয়ে আপনারা স্পষ্টভাবে ধারণা পেয়েছেন আশা করছি।
বৃষ্টির পানিতে কোন এসিড থাকে
বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে এই সম্পর্কে আপনারা ইতিমধ্যেই বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এখন অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে পানিতে কোন এসিড থাকে। পানিতে কোন এসিড থাকে এই বিষয়ে কিছু মানুষ জেনে থাকতে পারে। তবে যারা জানেন না তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেল। বৃষ্টির পানিতে সালফিউরিক অ্যাসিড থাকে।
তাছাড়া নাইট্রিক এসিডের উপাদান রয়েছে,যা বায়ুমন্ডল দূষণের কারণে তৈরি হয় যখন সালফার ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড বায়ুমন্ডলে মুক্তি পায়। তখন এই এসিড গুলো জলীয়বাষ্পের সাথে বিক্রিয়া করে সালফরিক অ্যাসিড কোন নাইট্রিক এসিড তৈরি হয়। এই এসিড গুলো বৃষ্টির সাথে মিশার কারণে এসিড বৃষ্টি বা এসিড রেইন বৃষ্টি হয়।আর এই এসিড বৃষ্টির কারণে আমাদের পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয় যেমন ধরুন।
মাটি ক্ষয় মাটির অম্লতা বৃদ্ধি পায়, জলাশয়ের এসিডিফিকেশন, বিভিন্ন ধরনের উচু উঁচু ভবন উপস্থাপনার ক্ষতি সাধন হয়। সাধারণত বৃষ্টির পিএইচ এর মাত্রা যদি ৫ থেকে ৬ এর মধ্যে থাকে তাহলে এসিড রেইন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম সে কমে যায়। কিন্তু এর মান যদি কমে আসে তাহলে এসিড রেইন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আশা করছি আপনারা সম্পূর্ণ বিষয় ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
বৃষ্টির পানি কি খাওয়া যায়
আপনারা ইতিমধ্যেই জেনেছেন বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন এবং কি কি অ্যাসিড রয়েছে এই সম্পর্কে। এবার জানাবো বৃষ্টির পানি কি খাওয়া যায়, বৃষ্টির পানি খেলে কি হয়, বৃষ্টির পানি কি বিশুদ্ধ, বৃষ্টির পানি প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ কিন্তু অন্যান্য কিছু উপাদানের কারণে এই পানি বিশুদ্ধতা থাকে না, এজন্য একেবারে বৃষ্টির পানি খাওয়া শরীরের জন্য নিরাপদ নয়। কারণ বাতাসের সঙ্গে বিভিন্ন ধুলাবালি রোগ জীবাণু রাসায়নিক পদার্থ মিশে পানি দূষিত হয়,যা খাওয়ার জন্য একদম উপযোগী নয়।
আবার ধরুন কোথাও পানি জমে আছে আপনি ওখান থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করবেন ভাবছেন কিন্তু ওই পানি খাওয়ার জন্য উপযোগী নয়। রাসায়নিক পদার্থ বা বিভিন্ন ধরনের জীবনুর কারণে আর পানি খেলে শরীরে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ ঘটতে পারে। এইজন্য বৃষ্টির পানি খাওয়ার আগে বিশুদ্ধ করে নেওয়া প্রয়োজন। বৃষ্টির পানি খাওয়ার আগে অবশ্যই ফুটিয়ে অথবা ফিল্ডার করে নিবেন। তাহলে জীবানুমুক্ত হবে।
কিছু কিছু অঞ্চলে বৃষ্টির পানি খাওয়ার জন্য সংগ্রহ করা হয় তবে ওই পানিগুলো সংগ্রহ করে পরিশোধন বা জীবন মুক্ত করে তবে ওই পানিগুলো খাওয়া হয়। যাতে এই পানি খেয়ে আপনার শরীরে কোন ঝুঁকি না থাকে। বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে খেলে শরীরে বেশ উপকার হয়।বৃষ্টির পানি খেলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হয়। যেমন ধরুন হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, ক্যান্সার নিরাময় করতে সাহায্য করে, গ্যাসের সমস্যা দূর করে,
এবং শরীরে এলার্জির প্রভাব দূর করে আর আপনারা তো জানেন বৃষ্টির পানিতে ভিটামিন বি ১২ পাওয়া যায়। এজন্য যারা ভাবেন বৃষ্টির পানি প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ এতে মোটেও ঠিক নয় বাতাসের সাথে বিভিন্ন উপাদান প্রাণীর সঙ্গে মিশে যা পানিকে দূষিত করতে সাহায্য করে। এই জন্য পানি খাওয়ার আগে অবশ্যই পানি বিশুদ্ধতা করে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে বৃষ্টির পানি খেলে আপনার স্বাস্থ্যের কোন ঝুঁকি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
বৃষ্টির পানিতে ভিজলে জ্বর কেন আসে
বৃষ্টির পানির বেশ কিছু উপকারিতা এবং হাতেগোনা কয়েকটি উপকারিতা রয়েছে। তবে বৃষ্টি পানিতে ভিজলে কেন জ্বর আসে এ প্রশ্নটা অনেকেই করে থাকেন তাদের জন্য মূলত আজকের এই আর্টিকেলটি বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মন দিয়ে পড়ুন। তাহলে চলুন বৃষ্টিতে ভিজলে কি কারনে জ্বর আসে সে সম্পর্কে জেনে নিন।
- প্রথম ধাপঃ বৃষ্টির পানিতে ভিজলে জ্বর আসার কারণ হলো বৃষ্টির পানি ঠান্ডা আদ্রতার হয়ে থাকে যা অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজলে আপনার শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্তনে সমস্যা হয়। যার ফলে জ্বর আসতে পারে।
- দ্বিতীয় ধাপঃ বৃষ্টির পানিতে দীর্ঘক্ষণ ভিজলে আপনার শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করে কমে যায়। তার কারণ হলো আপনার রূপ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যার ফলে আপনার ইনফেকশন সর্দি কাশি এবং জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- তৃতীয় ধাপঃ বৃষ্টির পানি বাতাসের সঙ্গে মিশে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু শরীরে যায়, যার মাধ্যমে আপনার শরীর বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ করতে পারে।
- চতুর্থ ধাপঃ গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরমে প্রায় কমবেশি অনেকের শরীরে ঘামাচি সৃষ্টি হয়। আপনার শরীরে যদি ঘামাচি থেকে থাকে তাহলে বৃষ্টির পানিতে ভিজতে পারেন, এতে খুব সহজে ঘামাচি নিরাময় হয়।
- পঞ্চম ধাপঃ বৃষ্টির পানিতে ভিজলে আপনার শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কাজ করে। ফলে আপনার ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- ষষ্ঠ ধাপঃ বৃষ্টির পানি মাটিতে মিশে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং বিভিন্ন জীবাণু মিশে পানি দূষিত করে যার ফলে আপনার শরীরে রোগব্যাধির সংক্রমণ করতে পারে।
- সপ্তম ধাপঃ আপনি এ সমস্যাগুলো এড়াতে বৃষ্টিতে ভিজে খুব তাড়াতাড়ি গোসল করে,শরীর শুকিয়ে নিন এতে আপনার এ ধরনের সমস্যা গুলো হবে না।
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের বেশকিছু পদ্ধতি রয়েছে তবে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনি বৃষ্টির পানি খুব সহজেই সংরক্ষণ করতে পারবেন। এতে অনেকদিন ভালো থাকবে বৃষ্টির পানি। তাহলে চলুন বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিন।
- পানির ট্যাংকঃ আপনারা চাইলে বৃষ্টির পানি সরাসরি পানির ট্যাংকে সংগ্রহ করতে পারেন। এই ট্যাংক গুলো আপনি চাইলে বাড়ির ছাদ অথবা মাটির নিচে রাখতে পারে। তবে পানি আসার পথে একটি ফিল্টার রাখতে হবে।
- আপনারা চাইলে বাড়ির ছাদে ও পানি সংগ্রহ করতে পারেন। এতে করে বাড়ির ছাদ এই সিস্টেমে তৈরি করতে হবে এবং বৃষ্টির পানি আসার পথ তৈরি করে রাখতে হবে তাহলে খুব সহজে বাড়ির ছাদে পানি সংরক্ষণ করা যাবে।
- ক্যানভাস ব্যাগঃ আপনারা চাইলে বৃষ্টির পানি ক্যানভাস ব্যাগ অথবা কাঁচের ট্যাংকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে পারেন।
- বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করার জন্য অবশ্যই একটি ভালো মানের ট্যাংকি সিলেক্ট করবেন। যেমন ধরুন প্লাস্টিক, স্টিল,স্টেইনলেস অথবা কংক্রিটের হয়ে থাকে। আর অবশ্যই খেয়াল রাখবেন টাংকি যেন একটি ডাকনা থাকে। সব সময় ঢাকনাটি ভালোভাবে লাগিয়ে রাখবেন। যাতে করে কোন ময়লা আবর্জনা অথবা পোকামাকড় প্রবেশ করতে না পারে।
- আপনি বৃষ্টির পানি যে ট্যাংকে রাখবেন অবশ্যই সেই ট্যাংকটি ছায়াযুক্ত একটি স্থানে রাখবেন যাতে বৃষ্টির পানির তাপমাত্রা ঠিক থাকে।
সম্মানিত পাঠক, আপনারা উপরউক্তি পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে বৃষ্টির পানি সারা বছর এই পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। আশা করছি এ বিষয়টি আপনারা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
বৃষ্টির পানির ফিল্টার পরিষ্কার করার পদ্ধতি
- প্রথম ধাপঃ প্রাথমিকভাবে বৃষ্টির পানি নোংরা ও পাতাযুক্ত এবং ময়লা ঝরানোর জন্য প্রাথমিক ফিল্টার ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করার প্রথম উপায়।
- দ্বিতীয় ধাপঃ বৃষ্টির পানির মধ্যে থাকা বিভিন্ন ধরনের জৈব পদার্থ ও রাসনিক উপাদান বের করতে আপনি কারর্ন ফিল্টার ব্যবহার করতে পারেন এটা আপনার পানির দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করবে। এবং মাটির কনা বা অন্যান্য অবাঞ্ছিত পদার্থ বের করতে আপনি সান্ড ফিল্টার ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার সকল ধরনের পদার্থ দূর হবে।বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করতেঃ বৃষ্টির পানি জীবাণুমুক্ত করতে আপনি চাইলে ক্লোরিন বা অন্যান্য উপযুক্ত উপাদান ব্যবহার করতে পারেন,এতে করে বৃষ্টির পানি খুব সহজে পরিশোধন হবে।
বৃষ্টির পানিতে গোসল করার উপকারিতা
আমরা আগে জেনেছি বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা। এবার আমরা জানবো বৃষ্টির পানিতে গোসল করার উপকারিতা। বৃষ্টির পানিতে গোসল করতে অনেকেরই মন চায়। কিন্তু আপনারা জানলে অবাক হবেন বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে আপনার শরীরে অনেক উপকার হয়। তাহলে চলুন বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে কি কি উপকার হয় সে সম্পর্কে জেনে নি--
- প্রচন্ড এই গরমে বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে শরীর অনেক শীতল হয়। কারণ বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা শোষণ করে শরীরকে শীতল অনুভব দেয়। যার ফলে শরীর অনেক ঠান্ডা হয়।
- বৃষ্টির প্রাকৃতিক পানিতে ভিজে গোসল করলে এটি আপনার ত্বকের জন্য খুব উপকারী হয়।কারণ বৃষ্টির পানিতে কিছু খনিজ ও আয়রনের উপাদান থাকে ত্বক ও চুলের জন্য উপকার হয়। বিশেষ করে যদি প্রাকৃতিক জলপ্রবাহের গোসল করেন সেক্ষেত্রে পানিতে থাকা খনিজ পদার্থ আপনার ত্বককে মোলায়ন ও সতেজ করতে সাহায্য করে।
- আপনার শরীরে যদি ঘামাচি চুলকানি এলার্জি এবং চর্ম রোগের সমস্যা হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি বৃষ্টির পানিতে ভিজতে পারেন। বৃষ্টির পানিতে ভিজলে আপনার এই সমস্যা গুলো দূর হবে। এবং আপনার ত্বকের খসখসে ভাব দূর করতে বৃষ্টির পানি খুব কার্যকর।
- বৃষ্টির পানিতে অ্যালকাইন অনুজীব থাকার কারণে শরীরে বিপাকে ফলে শরীরে ভিটামিন বি ১২ তৈরি হয়। এতে আপনার শরীরে যদি ভিটামিনের অভাব থেকে থাকে তাহলে বৃষ্টির পানিতে গোসল করার কারণে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হবে।
- আপনারা জানলে অবাক হবেন বৃষ্টির পানিতে গোসল করার ফলে আপনার চুলের গড়া মজবুত হয় চুল পড়া বন্ধ হয়। কারণ বৃষ্টির পানিতে অ্যালকাইন রয়েছে। যা আপনার চুলের খুশকি, চুলের ময়লা, রুক্ষতা দূর করতে সাহায্য করে। আপনার মাথার ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
- বৃষ্টির পানিতে গোসল করার ফলে আপনার শরীরে দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে।
- আপনি যদি মানসিক অশান্তি বা স্ট্রসে থাকেন, তাহলে অবশ্যই বৃষ্টির পানিতে গোসল করুন তাহলে দেখবেন আপনার মানসিক স্ট্রস কমে গিয়েছে।
- শুধু তাই নয় আপনি যদি বৃষ্টির পরিষ্কার পানিতে গোসল করতে পারেন তাহলে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের ময়লা বের করবে এবং ত্বকের পোরস গুলো খুলে দিবে। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
- অনেক সময় মন খারাপ থাকলে আপনি বৃষ্টির পানিতে গোসল করতে পারেন। এতে করে আপনার মনোমুগ্ধতা বাড়বে, মনটা প্রফুল্ল হবে, এবং মানসিক প্রশান্তির কারণ হতে পারে। কারণ বৃষ্টির পানি প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মনমুগ্ধ করতে পারে।
বৃষ্টির পানিতে গোসল করার ক্ষেত্রে সতর্কতা
- বৃষ্টির পানিতে গোসল করার আগে অবশ্যই আপনাকে এই নিয়মগুলো মিনি মেনে গোসল করতে হবে তাহলে স্বাস্থ্যের কোন ঝুঁকি থাকবে না।
- বৃষ্টির পানিতে গোসল করার সময় অবশ্যই আপনাকে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে,আসলে কি বৃষ্টির পানি পরিষ্কার আছে কিনা। যে জায়গায় বায়ু দূষিত সেখানে পানি দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সে জায়গায় এড়িয়ে আপনি গোসল করতে পারেন।
- বৃষ্টির পানিতে গোসল করার সময় অবশ্যই ১০ থেকে ১৫ মিনিট গোসল করবেন এর বেশি কখনোই গোসল করবেন না এতে ঠান্ডা জ্বর ওর সম্ভাবনা থাকে।
- আর অবশ্যই বৃষ্টির পানিতে গোসল করার পরে আপনি হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে একবার গোসল করে নিবেন এতে জ্বর এবং ঠান্ডা লাগার ঝুঁকি থাকবে না।
সম্মানিত পাঠক, আপনারা বৃষ্টির পানিতে গোসল করার আগে অবশ্যই বৃষ্টির পানি পরিষ্কার রয়েছে কিনা এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তবে গোসল করবেন। এতে করে আপনার ঠান্ডা লাগা জ্বর বা ইত্যাদি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কমে আসবে। আশা করছি আপনারা এই বিষয়ে স্পষ্টভাবে ধারণা পেয়েছেন।
বৃষ্টির পানিতে কি কি উপাদান রয়েছে
বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করার পদ্ধতি জানার পরে এবার হয়তো আপনারা জানতে চাইবেন বৃষ্টির পানিতে কি কি উপাদান থাকে। তাহলে চলুন জেনে আসি বৃষ্টির পানিতে কি কি উপাদান রয়েছে।
- বৃষ্টির পানিতে অল্প পরিমানে অ্যালকাইল এবং অনুজীব থাকে যার বিপাকে ভিটামিন বি ১২ তৈরি করতে পারে।
- বৃষ্টির পানিতে ছোট ছোট অণু কণা রয়েছে যা বাতাসের সঙ্গে মিশে বাষ্প আকারে আবার বৃষ্টি হয়ে ফিরে আসে।
- বাতাসে থাকা বিভিন্ন ধরনের গ্যাস যা পানিতে থাকতে পারে যেমন ধরুন অক্সিজেন নাইট্রোজেন কার্বন ডাই অক্সাইড ইত্যাদি।
- বৃষ্টির পানিতে সূক্ষ্ম ধুলাবালি বা অন্যান্য অঙ্কারিত উপাদান থাকতে পারে। এগুলো বাতাসের সাথে মিশে আবার বৃষ্টি হয়ে মাটিতে পতিত হতে পারে।
- বৃষ্টির পানিতে সমুদ্রে থাকা খনিজ উপাদান এবং খনিজ লবণ বা অন্যান্য খনিজ পদার্থ থাকতে পারে। য়েমন ক্লোরাইড ও সালফেট থাকতে পারে।
- তাছাড়াও বৃষ্টির পানিতে বিভিন্ন ধরনের তেজক্রিয়া ভারি পদার্থ সিসা আর্সেনিকযুক্ত পদার্থ থাকতে পারে।
- কখনো কখনো বৃষ্টি পানিতে বিভিন্ন ধরনের জৈবিক পদার্থ ফাঙ্গাল স্পোর ব্যাকটেরিয়াএবং ভাইরাস থাকতে পারে।
- বায়ু দূষিত হওয়ার কারণ শিল্প কারখানার কালো ধোঁয়া, এবং বৃষ্টির পানিতে সালফিউরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড থাকতে পারে। আরে এই অ্যাসিড গুলোর কারণে অনেক সময় অ্যাসিড বৃষ্টি হয়।
লেখকের মন্তব্য বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে
বৃষ্টির পানি খাওয়ার উপকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জেনেছেন। কিন্তু আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে কথা শুনলে আপনি অবাক হবেন যে বৃষ্টির পানিতে রয়েছে সব ধরনের ঔষধ। তাছাড়া আরো বলা হয়েছে বৃষ্টির পানি মধু হিসাবে গণনা করা হয়। বৃষ্টির পানি খেলে আমাদের শরীরে যাবতীয় রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করবে। তাহলে আপনারা তো বুঝতে পেরেছেন বৃষ্টির পানি আমাদের শরীরে জন্য কতটা উপকার।
বৃষ্টির পানিতে ভিজতে মন চায় না এমন মানুষ খুব কম রয়েছে। অনেকে এটা ভেবে বৃষ্টির পানিতে ভিজেনা কারণ বৃষ্টির পানিতে ভিজলে জ্বর সর্দি ঠান্ডা লাগা সম্ভব না থাকে। কিন্তু এই কথাটি সত্যি নয় বৃষ্টির পানি আমাদের শরীরে উপকারিতা নিয়ে আসে।তবে বৃষ্টির পানিতে ভিজার নিয়ম রয়েছে নিয়ম মেনে ভিজলে আপনার উপকার হবে। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
এমন তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের জুথি আটর্স আইটি ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
জুথি আর্টস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url