গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা জানেন কি? এবং বিটরুট খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আপনারা জানতে চান। আজকের আর্টিকেলে আমরা গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। গর্ভাবস্থায় বিটরুট খেলে একজন গর্ভবতী মা ও শিশুর কি কি উপকার হয়,
কারণ বিটরুটে পুষ্টিগুণে ভরপুর রয়েছে, কিন্তু কোন সময়ে বিট রুট খেলে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। সে সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
- গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় আপনার ডায়েটে যোগ করুন বিটরুট
- গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে বিটরুটের রস
- গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার সঠিক সময়
- গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কয়টা বিটরুট খাওয়া উচিত
- গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতার জন্য বিটরুটের রস কিভাবে খাবেন
- বিটরুটের রসের পুষ্টিগুণ
- গর্ভাবস্থায় বিটরুটের প্রস্তাবিত ডোজ
- গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার স্বাস্থ্যঝুঁকি
- লেখকের মন্তব্য গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
বিটরুট হলো একটি মূল জাতীয় সবজি। আমাদের দেশে বর্তমানে বিটরুট চাহিদা দিন দিন বেড়ে উঠছে। বিট রুটের পুষ্টিগুণ এতটাই বেশি যে গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য এই সবজির খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাছাড়াও বিটরুটে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ হওয়ার আপনার ক্রমবর্ধমান গর্ভের সন্তানের জন্য প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নিই, গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়া আপনার শরীরের জন্য কতখানি উপকারী হতে পারে।
- বিটরুটে রয়েছে ফাইবারের উপাদান যা গর্ভবতী মায়ের শরীরে ফোলা ভাব দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখাতে পারে। নিয়মিত বিটরুট খেলে একজন গর্ভবতী মায়ের পেটের সমস্যা দূর হয়, এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থায় অনেক ওজন বেড়ে যায়। সঠিক ওজন ধরে রাখার জন্য আপনার ডায়েটের খাদ্য তালিকায় কাঁচা বিটরুট যোগ করুন এতে আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
- বিটরুট খাওয়ার ফলে গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। এবং শরীরে ক্লান্তি এবং দুর্বলতা ঝুঁকি কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- বিটরুটে প্রচুর পরিমাণ ফলিক অ্যাসিড থাকার কারণে গর্ভাবস্থায় মা ও শিশু স্নায়বিক ত্রুটি এবং বিকাশ জনিত সমস্যা গুলির ঝুকি কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এবং বাচ্চার বিকাশ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এতে আবার নবজাতক শিশুরা মেরুদন্ডের হাড়ের উন্নতি করতে সাহায্য করে।
- বিটরুট গর্ভকালীন সময়ে রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে। ফলে গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে প্রি-ই ক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুঁকি অনেকটায় কমে যায়।
- অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।বিটরুটে পর্যাপ্ত পরিমান আয়রন থাকার কারণে গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় বিটরুট খেলে আপনার অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
- বিটরুটে রয়েছে অ্যান্ডিঅক্সিডেন্ট এর উপাদান। গর্ভাবস্থায় আপনি যদি নিয়মিত বিটরুট খান তাহলে গর্ভকালীন সময় বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে খুব সহজে আপনার শরীরকে রক্ষা করতে পারে।
- রক্তে সরকারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, অনেক সময় গর্ভবতী মায়ের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। গর্ভাবস্থায় আপনি যদি নিয়মিত বিটরুট খান তাহলে এটি গ্লুকোজে রূপান্তরিত হতে এবং রক্তের মধ্যে শোষিত হতে অনেক বেশি সময় নয়। যার ফলে রক্তে সরকারের মাত্রা স্বাভাবিক ভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় আপনার ইলেকট্রোলাইটে ভারসাম্য আনতে এবং ক্রিয়া করতে রিটরুট খাওয়া উচিত। কেননা বিটরুটে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম। এজন্য গর্ভাবস্থায় আপনার রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থায় হাড়কে দুর্বল ও ভঙ্গুর করে দেয়। এইজন্য আপনি বিটরুট খেতে পারেন,কারণ বিটরুটের মধ্যে রয়েছে সিলিকা এবং ক্যালসিয়াম যা আপনার হাড় এবং দাঁত কে শক্ত রাখতে সাহায্য করে।
- শরীরের প্রদাহ রোধ করতে বিটরুট৷ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। গর্ভাবস্থায় অনেকের জয়েন্ট ব্যথা অথবা ফুলে যাওয়া শুরু করে। আপনি যদি গর্ভাবস্থায় বিটরুট খান তাহলে এসব প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।
- বিটরুটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এর বিদ্যমান।যা একজন গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা ও প্রসবের পথ তৈরি করতে সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থায় অনেকের রক্তের সমস্যা দেখা দেয় বিটরুট খাওয়ার ফলে আপনার রক্তের বিষাক্ত পদার্থ গুলোকে বের করে স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থায় নিশ্চিত করতে পারে।
- অনেক শিশুর জন্মগতভাবে অনেক ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। এ সমস্যা গুলো মূলত পুষ্টিহীনতা কারণে হয়। গর্ভাবস্থায় আপনি যদি বিটরুট খেতে পারেন তাহলে এগুলো সমস্যা থেকে রেহাই মিলে।
সম্মানিত পাঠক,গর্ভকালীন সময় মায়েরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুষ্টিহীনতায় ভোগে। আর এই পুষ্টিহীনতা দূর করতে আপনি নিয়মিত বিটরুট খেতে পারেন। এতে আপনার শরীরের পুষ্টিহীনতা দূর হবে।দুর্বলতার ঝুঁকি কমে যাবে। এবং শরীরের ক্লান্তি ভাব অনেকটাই দূর হবে। তাছাড়াও গর্ভবতী মা এবং শিশু দুজনেই সুস্থ থাকবে। দুজনকপ সুস্থ রাখতে আপনি নিয়মিত বিটরুট খেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় আপনার ডায়েটে যোগ করুন বিটরুট
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। গর্ভাবস্থায় গর্ভকালীন অসুস্থতা এবং আপনার বমি বমি ভাব একবার কেটে গেলে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় অন্যান্য সবজির সাথে বিটরুট যুক্ত করতে পারেন। তাহলে চলুন গর্ব অবস্থায় আপনি কিভাবে বিটরুট খাবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
আপনি চাইলে বিটরুট চা হিসেবে খেতে পারেন, বিট রুটের চায়ের সব থেকে উপকারী দিক হলো এর মধ্যে বলদায়ক বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং কোনরকম ক্যাফিন থাকেনা। এবার হয়তো আপনারা প্রশ্ন করবেন যে বিটরুটের চা কিভাবে তৈরি করব তাহলে চলুন জানিয়ে দিচ্ছি।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- পরিমাণ মতো পানি নিন।
- বিটের পরিমাণ- ৪টি টুকরো
- মধুর পরিমাণ - ১ চা চামচ
- লেবুর রসের পরিমাণ - ২ টেবিল চামচ।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
বিটরুটের চা তৈরি করতে প্রথমে আপনি একটি পরিষ্কার পাত্র নিন। এরপরে উক্ত পাত্রে ভালো করে পানি ফুটিয়ে নিয়ে তার সাথে বিটরুট লেবুর রস এবং মধু যোগ করুন। এরপরে উপকরণগুলো একসাথে ভালোভাবে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন। ব্যাস ফুটানো হয়ে গেলে চুলা বন্ধ করে প্রায় ১৫ মিনিট রেখে থেকে নিয়ে চায়ের মতো খেতে পারেন।
বিটরুটের গুড়ো হিসেবেঃ
বিটরুট খাওয়ার আরো একটি সহজ উপায় হলো বিটরুটের মিহি পাউডার করে সেটি আপনি পানি অথবা অন্যান্য ফলের রসের সাথে মিশিয়ে পান করতে পারেন। তাহলে চলুন বিটরুট পাউডার হিসাবে কিভাবে খেতে পারবেন। সেই পদ্ধতিটি আপনাকে জানিয়ে দিই।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- প্রথমে একটি বিটরুট নিন। এবং বিটরুটটি পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে নিন। এবং সেটিকে পাতলা পাতলা স্লাইস কেটে নিন।
- এবার স্লাইস করা বিটরুটের টুকরো গুলোকে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এর জন্য আপনি পাতলা নেটের মশারির কাটা অংশ দিয়ে ঢেকে রোদে শুকিয়ে দিতে পারেন। তাছাড়া অন্যান্য পদ্ধতিতে শিখিয়ে নিতে পারেন। আবার চুলাই কম আচে শুকিয়ে নিতে পারেন।
- পরিপূর্ণভাবে শুকিয়ে গেলে আপনারা ব্লেন্ডারে গুড়ো করে নিতে পারেন, অথবা সিল- পাটায় বেটে গুঁড়ো করে নিতে পারেন।
- আপনার বিটরুটের গুড়ো তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেগুলো আপনি একটি পরিষ্কার পাত্রে অথবা বয়ামে সংরক্ষণ করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন বয়ামের মধ্যে যেন বাতাস না ঢুকতে পারে।
সম্মানিত পাঠক,আশা করছি আপনারা বিটরুটের পাউডার তৈরি করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এবং গর্ভাবস্থায় আপনি চাইলে এই দুইভাবে খেতে পারেন এতে আপনার গর্ভাবস্থায় জার্নিটা সহজ হবে।
গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে বিটরুটের রস
একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে বিটরুটের রস খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। কারণ বিটরুটে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন উপাদান রয়েছে যা একজন গর্ভবতী মায়ের অত্যন্ত প্রয়োজন। যেমন ধরুন ভিটামিন সি, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ডি, আয়োডিন,আয়রন,খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যা একজন গর্ভবতী মা ও শিশুর পুষ্টির যোগান দিতে সাহায্য করে।
এবং শরীরে সুস্থ কোষের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে। তাছাড়াও বিটরুটের রস হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য এবং রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে সচল রাখে। এবং নবজাতক শিশুর অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় একজন মা যদি নিয়মিত প্রতিদিন বিট রুটের রস পান করে তাহলে ওই মায়ের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক অংশে কমে যায়।
গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মা যদি রক্তস্বল্পতায় ভুগে থাকেন সে ক্ষেত্রে বিটরুটের রস খেলে এই রোগ থেকে রেহাই মিলবে। আপনার রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বিটরুটের রস থেকে সবচেয়ে ভালো উপকার পেতে আপনি গর্ব অবস্থায় প্রথম মাস থেকে বিটরুটের রস পান করতে পারেন।
তাছাড়াও আপনি আপনার প্রতিদিনের খাবারের সাথে বিটরুট যোগ করতে পারেন। বিভিন্ন উপায়ে বিটরুট খেতে পারেন। বিটরুট থেকে স্বাস্থ্যকর উপকারিতা পেতে আপনি সকালে খালি পেটে এর রস পান করতে পারেন। নিজেকে ভালো রাখতে এবং গর্বের নবজাতক শিশুকে ভালো রাখতে নিয়মিত বিটরুট খেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার সঠিক সময়
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা এখন অনেক কিছু জেনেছি।কিন্তু সঠিক সময় অনুযায়ী বিটরুট না খেলে সর্বাধিক উপকারিতা পাওয়া সম্ভব নয়।এইজন্য গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। গর্ভাবস্থায় যেমন পুষ্টিকর খাবার খাওয়া আপনার শরীরের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণী সম্পূর্ণ এই ফলটি খাওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেন।
বিটরুট একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য কতটা উপকারী একটি সবজি বা ফল তা শুধু বিশেষজ্ঞরা আপনাদেরকে জানাতে পারবে। বিটরুট আপনি বিভিন্ন উপায়ে খেতে পারবেন যেমন ধরুন কাঁচা বিট রুট রস করে অন্যান্য জুসের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারবেন।অথবা আপনি চাইলে দুপুরের খাবারের সঙ্গে সালাদ হিসাবে খেতে পারেন।বিদ্রোতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ, খনিজ,ফলিক অ্যাসিড, আয়রন ও অ্যান্ডিঅক্সিডেন্ট এর উপাদানে ভরপুর।
যা প্রত্যেকটা মানুষের জন্য এই পুষ্টিগুণ গুলো প্রয়োজন। তাহলে আপনারাই বিবেচনা করুন একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য বিটরুট কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি সবজি হতে পারে, আশা করছি আপনারা বুঝতে পেরেছেন
গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কয়টা বিটরুট খাওয়া উচিত
বিটরুটের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি কিন্তু প্রয়োজনের অধিক বা অতিরিক্ত পরিমাণ ভালো নয়। বিটরুটের ক্ষেত্রেও বিকল্প নয়, এইজন্য বিটরুট দিনে কমপক্ষে ২টি বিটরুট খাওয়া যেতে পারে। আপনি যদি জুস অথবা সালাত হিসাবে খেয়ে থাকেন তাহলে ২টি বিটরুট আপনার শরীরের জন্য আপনার শরীরের জন্য বেস্ট।
কিন্তু আপনি যদি বিটরুট সবজি হিসেবে খেতে চান তাহলে দিনে ৩টি বিটরুট খেতে পারেন। এতে আপনার শরীরে কোন সমস্যা হবে না বরং উপকারী হবে। একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য বিটরুট অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। এইজন্য নিয়মিত সঠিক পরিমাণ মতো বিটরুট খাওয়ার চেষ্টা করুন।
গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতার জন্য বিটরুটের রস কিভাবে খাবেন
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা ইতিমধ্যে জেনেছেন। কিন্তু গর্ভাবস্থায় একটি কমন সমস্যা হলো গর্ভবতী মায়ের রক্তস্বল্পতার সমস্যা দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় আপনি কিভাবে বিটরুট খেয়ে এই রক্তস্বল্পতা দূর করবেন তাহলে চলুন জেনে নিন। এইজন্যই ডাক্তাররা একজন গর্ভবতী মাকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন নিয়মিত বিটরুট খাওয়ার। গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার ফলে একজন গর্ভবতী মায়ের যাবতীয় পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে সহযোগিতা করে।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে আপনি বিটরুটের রস কিভাবে তৈরি করবেন তাহলে চলুন আপনি জেনে নিন। প্রথমে বিটরুট নিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। এবং ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। তারপরে ব্লেন্ডারের সাহায্যে ব্লেন্ড করে আপনি বিটরুটের রস তৈরি করে নিন। কিন্তু আপনার যদি বিটরুটের রস শুধু খেতে ভালো না লাগে তাহলে আপনি অন্যান্য উপকরণ যেমন ধরুন লেবুর রস, কমলালেবুর রস আরো ইত্যাদি উপকরণ মিক্স করতে পারেন এভাবে খেলে আপনার বিটরুটের রসের স্বাদ চেঞ্জ হবে কিন্তু উপকার একই রকম থাকবে।
গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা দূর করতে সকালে খালি পেটে এক গ্লাস বিটরুটের রস খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। কারণ এটি আপনার শরীরে আয়রনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় বিটরুটের রস,তাছাড়াও আপনি চাইলে বিটরুট অন্যান্য উপায়েও খেতে পারেন যেমন ধরুন সবজি হিসেবে রান্না করে অথবা সালাদ হিসাবে।আবার বিভিন্ন পানীয় হিসেবে খেতে পারেন। তবে আপনার যদি স্বাস্থ্যগত বিশেষ কোনো রোগ হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে ওষুধ সেবন করে থাকেন।
তাহলে বিটরুট খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। কারণ বিটরুটে এমন কিছু যৌগ উপাদান রয়েছে, যা আপনার শরীরে বিক্রিয়া ঘটাতে পারে যার শরীরে বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সেই অনুযায়ী আপনার শরীরের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বিটরুটের প্রস্তাবিত ডোজ
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়া অত্যন্ত উপকারী কিন্তু বিটরুট খাওয়া সঠিক নিয়ম ও পরিমান মতো খাওয়া উচিত। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন এক গ্লাস বিটরুটের রস পান করার পরামর্শ দেন। কারণ বিটরুটে রয়েছে ভিটামিন বি৯ এবং ফলিক অ্যাসিড যা ব্রেনের স্নায়ুতন্ত্রে বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। তাছাড়াও বিটরুটে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর উপাদান এবং ফাইবার যা আমাদের শরীরে পাচনতন্ত্রকে ভালো রাখে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। হার্টের স্বাস্থ্য উন্নতি করে,
এবং উচ্চ রক্তচাপ কমায়,ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।বিটরুট থেকে আপনি স্বাস্থ্যকর উপকারিতা পেতে চাইলে তরতাজা টাটকা বিটরুট খাওয়ার চেষ্টা করুন।বিটরুট আপনি যেকোন উপায়ে যে কোন খাবারের সঙ্গে সালাদ অথবা রস করে খেতে পারেন। এতে আপনি সর্বাধিক উপকারিতা পাবেন।
বিটরুটের রসের পুষ্টিগুণ
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা কি তা বলার বাকি থাকে না। এইজন্য ডাক্তাররা গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিটরুটের রয়েছে ভিটামিন ও খনিজের উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।তাহলে চলুন ১০০ মিলিমিটার বিটরুটের রসে কি পরিমান পুষ্টিগুণ রয়েছে সে সম্পর্কে জেনে নিন।
- শক্তি -৩৪ কিলো ক্যালরি
- কার্বোহাইড্রেড - ৮.৭৪ গ্রাম
- চিনি - ৮.৭২ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম -১৬ মিলিগ্রাম
- প্রোটিন - ০.৩৬ মিলিগ্রাম
- আয়রন - ০.৭২ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস - ১৭ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম - ২৪৬ মিলিগ্রাম
- আয়োডিন- ৫৪ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম - ১৭ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম - ১১মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি- ২.৪ মিলিগ্রাম
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার স্বাস্থ্যঝুঁকি
বিটরুটের অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।তেমনি কিছু স্বাস্থ্য অপকারিতা ও রয়েছে। আপনি যদি সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে বিটরুট খেতে পারেন তাহলে আপনার স্বাস্থ্য এড়াতে পারবেন। আর না হলে আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকি বা শরীরে বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে তাহলে চলুন গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার স্বাস্থ্য ঝুকি সম্পর্কে জেনে নিন।
- বিটরুটে রয়েছে বিটেন নামক এক প্রকার উপাদান। যার ফলে অতিরিক্ত বিটরুট খেলে আপনার বমি বমি ভাব বা গা গোলানো অথবা ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত বিটরুট খাওয়ার ফলে বিটেন নামক উপাদান শরীরে বেশি পরিমাণ হয়ে যায় যার ফলে আপনার প্রসাব অথবা মল বিটের রঙে রূপান্তরিত হতে পারে।
- আপনি যদি গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণ বিটরুট খেয়ে ফেলেন সেক্ষেত্রে আপনার গলার ভোকাল কার্ডে স্বরযন্ত্র পারালাইসিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- বিটরুটে রয়েছে অক্সালেট,অতিরিক্ত বিটরুট খেলে শরীরে অক্সালেটের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যার ফলে কিডনি পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
- বিটরুটে রয়েছে নাইট্রোজেনের উপাদান বিদ্যমান, যার কারণে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত বিটরুট খেলে শরীরে ক্লান্তি ও দুর্বল ভাব দেখা দেয়।
- সম্মানিত পাঠক,আশা করছি আপনারা গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার স্বাস্থ্যঝুকি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। বিটরুটের সম্পূর্ণ উপকারিতা পেতে অবশ্যই আপনাকে নিয়মিত পরিমাপ অনুযায়ী সঠিক সময় খেতে হবে তাহলে আপনি বিটরুট থেকে স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবেন।
লেখকের মন্তব্য গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে ইতিমধ্যেই আপনারা জেনেছেন। গর্ভাবস্থায় বিটরুট খেলে একজন গর্ভবতী মায়ের সারাদিনের ক্লান্তি এবং শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয় পুষ্টিগুণে ভরা এই বিটরুট আপনি সবজি হিসেবে রান্না করেও খেতে পারবেন। তাছাড়াও আপনি চাইলে বিটরুট পাউডার খেতে পারবেন। পুষ্টিগুণে ভরপুর বিটরুট আমাদের শরীরে বিভিন্ন পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে।
এইজন্য গর্ব অবস্থায় বিটরুট আপনার প্রতিদিনের খাবারের সঙ্গে যোগ করুন এতে আপনার যাবতীয় সমস্যা দূর হবে। তবে একটি কথা না বললেই নয় বিটরুট যেমন স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী তেমনি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে শরীরে বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এইজন্য চেষ্টা করুন সঠিক পরিমাণে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে বিটরুট খাওয়ার এতে আপনি স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবেন। আশা করছি আপনি বুঝতে পেরেছেন।
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে অবশ্যই পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। এমন নিত্য নতুন তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন, এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
জুথি আর্টস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url